শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭ 0 টি মন্তব্য

গল্প - ৮: দুষ্টু মাতাল

দুষ্টু মাতাল

লেখক: আরিফুর রহমান


এক ছোট্ট গ্রামে একটি দুষ্টু মাতাল বাস করতো। তার নাম ছিলো রমেশ। রমেশ নানান রকমের নেশা করতো আর মাতাল হয়ে গ্রামবাসীদের নানাভাবে বিরক্ত করতো। গ্রামের লোকেরা তাকে কেউই পছন্দ করতো না। তার দুষ্টুমি আর মাতলামি কারণে সবাই তাকে এড়িয়ে চলতো।

দার্শনিক মাতাল

রমেশকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে, সে দার্শনিকের মত ভাবগম্ভীর কিছু কমন বুলি ঝাড়তো। তার কথা শুনে মনে হতো সে খুব জ্ঞানী, কিন্তু বাস্তবে সে ছিল একদম উল্টো। গ্রামের লোকেরা তার এই কাণ্ড দেখে হাসতো, কিন্তু তার নেশাগ্রস্ত আচরণের কারণে সবাই তাকে দূরে রাখতো।

সিনেমার শুটিং

একদিন গ্রামের সবাই খুব উত্তেজিত হয়ে গেলো, কারণ গ্রামে সিনেমার লোক এসেছে সিনেমার শুটিং করতে। গ্রামের সব লোকই খুব খুশি ছিলো এবং শুটিং দেখতে ভিড় করেছিলো। রমেশও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নানান দুষ্টুমি করার পরিকল্পনা করলো। সে ভাবলো, "কিভাবে এই শুটিং পন্ড করা যায়?"

মাতাল গরু

রমেশ এক গরুকে মদ খাইয়ে মাতাল করে দিলো। মাতাল গরু শুটিং পন্ড করতে মাঠে নেমে এলো। গরুটি দৌড়ে শুটিংয়ের মধ্যে ঢুকে পড়লো, আর সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। শুটিং পন্ড হওয়ার উপক্রম হলো।

রমেশের বীরত্ব

রমেশ তখন সামনে এসে গরুটাকে মেরে কুপোকাত করলো। সিনেমার লোকেরা তার এই কাণ্ড দেখে মুগ্ধ হলো। তারা ভাবলো, রমেশ খুব সাহসী আর বীরত্বপূর্ণ কাজ করেছে। তারা তাকে হিরো সাজিয়ে তুললো এবং তার কৃতিত্ব নিয়ে প্রশংসা করতে লাগলো। রমেশ গ্রামের লোকদের চোখে হিরো হয়ে উঠলো।

প্রশংসা আর খ্যাতি

সিনেমার লোকেরা রমেশের কৃতিত্ব নিয়ে ডকুমেন্টারি বানালো। রমেশ সংবাদ শিরোনাম হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলো। সবাই তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু করলো। তার অনেক ফ্যান ফলোয়ার তৈরি হলো। রমেশের জীবনী নিয়ে ডকুমেন্টারি তৈরী হলো, আর সে একদিনে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছালো।

চমকপ্রদ তথ্য

কিন্তু একদিন হঠাৎ এক চমকপ্রদ তথ্য বেরিয়ে এলো। গ্রামের কিছু লোক খুঁজতে শুরু করলো, কীভাবে গরুটি মাতাল হয়েছিল। তদন্তে বেরিয়ে এলো, রমেশই গরুটিকে মদ খাইয়ে মাতাল করেছিল। এই তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর সবাই হতবাক হয়ে গেলো। তারা বুঝতে পারলো, রমেশ নিজের কৃতিত্ব দেখানোর জন্যই এই দুষ্টুমি করেছিল।

হিরো থেকে ভিলেন

এই শকিং তথ্য বের হওয়ার পর রমেশের খ্যাতি ধূলিসাৎ হয়ে গেলো। গ্রামের লোকেরা তাকে হিরো থেকে ভিলেন বানিয়ে দিলো। সবাই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তার ফ্যান ফলোয়াররাও তাকে ছেড়ে চলে গেলো। রমেশ একদম একা হয়ে গেলো।

শিক্ষার মর্ম

এই গল্প আমাদের শেখায়, মিথ্যা আর দুষ্টুমি করে কখনও স্থায়ী সুখ বা খ্যাতি অর্জন করা যায় না। সত্য সবসময় প্রকাশিত হয়, আর মিথ্যা কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না। রমেশের মত আমাদেরও উচিত সৎভাবে কাজ করা এবং মিথ্যা আর দুষ্টুমি থেকে দূরে থাকা।

রমেশের জীবনের এই ঘটনার পর সে বুঝতে পারলো, সৎভাবে জীবন যাপন করাই শ্রেষ্ঠ। সে সিদ্ধান্ত নিলো, আর কখনও মিথ্যা বলবে না এবং সৎভাবে জীবন যাপন করবে। তার এই পরিবর্তন দেখে গ্রামের লোকেরা আবার তাকে গ্রহণ করলো এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা ফিরিয়ে আনলো।

রমেশের এই গল্প আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়, সৎভাবে জীবন যাপন করাই আমাদের সত্যিকারের খ্যাতি এবং সুখ এনে দেয়। মিথ্যা আর দুষ্টুমি কখনও আমাদের জীবনে সুখ এনে দিতে পারে না।