খাল কেটে কুমির আনা
লেখক: আরিফুর রহমান
একটি ছোট্ট গ্রাম ছিলো, যার নাম ছিলো সবুজপুর। সবুজপুর গ্রামের মানুষজন খুবই পরিশ্রমী ছিলো। তারা সবসময় নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। তবে গ্রামের এক প্রান্তে একটি ছোট্ট বাড়িতে একজন অলস লোক থাকতো। তার নাম ছিলো রামু। রামু সারাদিন কিছুই করতো না, শুধু শুয়ে বসে সময় কাটাতো।
অলস রামুর দিনকাল
রামু অলস হলেও তার মাথায় নানা রকম ফন্দি-ফিকির ঘুরতো। সে ভাবতো, "কেন এত কষ্ট করে কাজ করতে হবে? নিশ্চয়ই কোন সহজ পথ আছে, যাতে কাজ না করেও সবকিছু পাওয়া যায়।" এই ভাবনা তাকে সবসময় ব্যস্ত রাখতো, যদিও সে বাস্তবে কিছু করতো না।এক অলসের খেয়াল
একদিন রামুর মাথায় এক নতুন ফন্দি এল। সে ভাবলো, "যদি আমার বাড়ির পাশে একটা খাল কাটি, তাহলে হয়তো মাছ ধরা সহজ হবে। খাল থেকে সহজেই মাছ ধরা যাবে, আর আমাকে কষ্ট করে পুকুরে যেতে হবে না।" এই ভাবনা তাকে এতটাই আনন্দ দিলো যে, সে তৎক্ষণাৎ খাল কাটার পরিকল্পনা শুরু করলো।পরিকল্পনার বাস্তবায়ন
রামু তার বন্ধুদের কাছে গিয়ে বললো, "বন্ধুরা, যদি আমরা আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে একটা খাল কাটতে পারি, তাহলে আমাদের আর পুকুরে যেতে হবে না। খাল থেকেই আমরা মাছ ধরতে পারবো। এটা আমাদের সবার জন্যই খুবই সুবিধাজনক হবে।" বন্ধুরা রামুর কথায় রাজি হয়ে গেলো এবং সবাই মিলে খাল কাটার কাজ শুরু করলো।খাল কাটার কাজ
রামু এবং তার বন্ধুরা দিন-রাত এক করে খাল কাটতে লাগলো। তারা খুবই খুশি ছিলো যে, শীঘ্রই তাদের মাছ ধরার কাজ অনেক সহজ হয়ে যাবে। খাল কাটা শেষ হলে সবাই খুশি হয়ে বাড়ি ফিরলো এবং পরদিন থেকে মাছ ধরার জন্য প্রস্তুত হলো।কুমিরের আগমন
কিন্তু ঘটলো বিপত্তি। খাল কাটার পরপরই একটি কুমির সেই খালে এসে বাসা বাঁধলো। কুমিরটি খালের পানিতে ঘুরে বেড়াতে লাগলো আর গ্রামের মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। তারা বুঝতে পারলো, খাল কাটার মাধ্যমে তারা নিজেদের বিপদ ডেকে এনেছে।গ্রামের আতঙ্ক
গ্রামের মানুষজন রামুকে বললো, "তুমি আমাদের বলেছিলে খাল কাটলে আমাদের সুবিধা হবে, কিন্তু এখন এই কুমির আমাদের জন্য বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা এখন কি করবো?" রামু বুঝতে পারলো, তার অলসতার খেয়ালে সে আসলে সবাইকে বিপদে ফেলে দিয়েছে।কুমির থেকে মুক্তি
গ্রামের প্রধান, যিনি খুবই বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি বললেন, "আমরা যদি এই কুমিরটাকে সরাতে না পারি, তাহলে আমাদের গ্রাম বিপদে পড়ে যাবে। আমাদের সবাইকে মিলে কিছু করতে হবে।" সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলো, তারা একটি খাঁচা বানিয়ে কুমিরটিকে ধরবে এবং দূরের জঙ্গলে ছেড়ে আসবে।একত্রিত প্রচেষ্টা
গ্রামের সবাই মিলে একটি বড় খাঁচা তৈরি করলো। তারা খালের ধারে খাঁচাটি বসিয়ে রাখলো এবং তার মধ্যে কিছু খাবার রাখলো। কুমির খাবারের লোভে খাঁচার ভিতরে ঢুকতেই খাঁচার দরজা বন্ধ করে দিলো। এরপর সবাই মিলে কুমিরটিকে জঙ্গলে ছেড়ে দিলো।রামুর শিক্ষা
রামু এই ঘটনার পর বুঝতে পারলো, অলসতার খেয়ালে কোন কাজ করলে তা শুধু নিজেরই নয়, অন্যদেরও বিপদে ফেলে দিতে পারে। সে সিদ্ধান্ত নিলো, আর কখনও এমন বোকামি করবে না এবং পরিশ্রম করে জীবনের প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করবে।শিক্ষার মর্ম
এই গল্প আমাদের শেখায়, খাল কেটে কুমির আনা খুবই বিপজ্জনক। অলসতা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজের ফল সবসময়ই খারাপ হয়। আমাদের উচিত, সবসময় বিবেচনা করে, দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা। আমাদের কাজ যেন আমাদের এবং অন্যদের জন্য বিপদ না ডেকে আনে, সে বিষয়ে সবসময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন।সবুজপুর গ্রামের মানুষজন রামুর এই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও সচেতন হলো। তারা বুঝতে পারলো, সঠিক পরিকল্পনা এবং দায়িত্বশীল কাজই সফলতা এনে দেয়। রামু নিজেও তার জীবনে এই শিক্ষাটি কাজে লাগিয়ে একজন দায়িত্বশীল এবং পরিশ্রমী ব্যক্তি হয়ে উঠলো।
এই গল্পের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, যে কোন কাজ করার আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত এবং অলসতা ত্যাগ করে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে আমাদের জীবনে সফলতা আসবেই এবং আমরা সুখে-শান্তিতে থাকতে পারবো।
0 টি মন্তব্য:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন