শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭

গল্প - ৬: গুজব

গুজব

লেখক: আরিফুর রহমান


একটি ছোট্ট গ্রাম ছিলো, যার নাম ছিলো শান্তিপুর। সেই গ্রামে সবাই মিলেমিশে থাকতো। গ্রামের মানুষজন খুবই সরল আর সাদাসিধে ছিলো। তারা সবাই একে অপরের সাহায্যে সবসময় প্রস্তুত থাকতো। কিন্তু একদিন, গ্রামের এই সরল জীবনযাত্রায় একটি ঘটনা ঘটে, যা পুরো গ্রামকে বদলে দেয়।

গুজবের শুরু

একদিন গ্রামের একটি বটগাছের নিচে বসে কয়েকজন লোক গল্প করছিলো। হঠাৎ একজন লোক, যার নাম ছিলো রতন, বললো, "শুনেছো, পাশের গ্রামে নাকি চোর ঢুকেছে। তারা আমাদের গ্রামে আসার পরিকল্পনা করছে।" এই কথাটা শুনে অন্যরা আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। তারা ভাবলো, "যদি সত্যি চোর আসে তাহলে তো আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।"

গুজবের বিস্তার

রতনের কথাটা গ্রামের সবাইকে জানানো হলো। ধীরে ধীরে পুরো গ্রামে খবরটি ছড়িয়ে পড়লো। সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠলো। গ্রামের মহিলারা তাদের গয়না লুকিয়ে রাখতে শুরু করলো, পুরুষরা রাতে পাহারা দিতে শুরু করলো। শিশুরা রাতে ঘুমাতে ভয় পেতে লাগলো।

গুজবে কান দিয়ে চিলের পিছনে ছোটা

কিছু লোক ছিল যারা গুজবে কান দিয়ে চিলের পিছনে ছুটতে লাগলো। তারা সারাদিন চোরের খোঁজে গ্রাম ঘুরে বেড়াতে লাগলো। কেউ কেউ বললো, "আমি তো কাল রাতে একজন অচেনা লোককে গ্রামে ঢুকতে দেখেছি।" আবার কেউ বললো, "আমার বাড়ির পাশে কিছু সন্দেহজনক শব্দ শুনেছি।"

গুজব রটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা

কিন্তু গ্রামের কিছু লোক এই গুজব রটিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করলো। তারা ভাবলো, "যদি সবাই চোরের ভয় পায়, তাহলে আমরা তাদের গয়না, টাকা-পয়সা লুকিয়ে রাখার জায়গাগুলো জেনে নিতে পারি।" তারা রাতের আঁধারে মানুষের বাড়িতে গিয়ে দেখলো কোথায় কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

গ্রামের অশান্তি

গ্রামে অশান্তি ছড়িয়ে পড়লো। মানুষজন একে অপরের উপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করলো। কেউ কারো কথা বিশ্বাস করতে পারছিল না। গ্রামের সাধারণ জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লো।

গুজবের প্রতিকার

একদিন গ্রামের প্রধান, যার নাম ছিলো হরিদাস, এই পরিস্থিতি দেখে চিন্তিত হয়ে পড়লো। তিনি ভাবলেন, "এই গুজব আমাদের গ্রামের শান্তি নষ্ট করে দিয়েছে। কিছু একটা করতে হবে।" তিনি গ্রামের সবাইকে ডেকে পাঠালেন। সবাই বটগাছের নিচে জমায়েত হলো।

গ্রামের প্রধানের ভাষণ

হরিদাস সবাইকে বললেন, "শোনো, আমাদের গ্রামে চোর এসেছে এমন কোন প্রমাণ নেই। আমরা শুধুমাত্র কথায় কান দিয়ে নিজেদের অশান্তি ডেকে এনেছি। আমরা একে অপরকে সন্দেহ করতে শুরু করেছি, যা আমাদের গ্রামের সম্প্রীতি নষ্ট করে দিচ্ছে। আমাদের উচিত, এই গুজব থেকে বেরিয়ে আসা এবং আবার মিলেমিশে থাকা।"

গুজবের শেষ

হরিদাসের কথায় সবাই একটু ভেবে দেখলো। তারা বুঝতে পারলো, তারা সত্যিই গুজবের পেছনে ছুটে নিজেদের শান্তি হারিয়ে ফেলেছে। সবাই সিদ্ধান্ত নিলো, আর গুজবে কান না দিয়ে একে অপরের উপর বিশ্বাস রেখে চলবে। ধীরে ধীরে গ্রামের মানুষজন আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলো।

শিক্ষার মর্ম

এই গল্প আমাদের শেখায়, গুজব কতটা ক্ষতিকর হতে পারে। আমরা যখন গুজবে কান দেই, তখন আমাদের জীবনে অশান্তি আর বিপর্যয় নেমে আসে। গুজবের পেছনে ছুটে আমরা আমাদের বিশ্বাস আর সম্প্রীতি হারিয়ে ফেলি।


গুজব রটানো, গুজবে কান দেয়া, আর গুজব থেকে ফায়দা লোটার এই প্রবণতা আমাদের সমাজে অনেক ক্ষতি করতে পারে। আমাদের উচিত, সত্য-মিথ্যা যাচাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। গুজব থেকে দূরে থাকা এবং একে অপরের উপর বিশ্বাস রেখে চলা আমাদের জীবনে শান্তি এবং সুখ নিয়ে আসতে পারে।

শান্তিপুরের মানুষজন এই ঘটনার পর থেকে আরও সতর্ক হলো। তারা আর কখনও গুজবে কান দিলো না এবং আবারও মিলেমিশে সুখে থাকতে শুরু করলো। এই গল্প আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়, গুজব রটানো এবং গুজবে কান দেয়া উচিৎ নয়। আমাদের উচিত সত্য-মিথ্যা যাচাই করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া এবং সমাজের শান্তি বজায় রাখা।

0 টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন