শনিবার, ২০ মে, ২০১৭

গল্প - ৫: দাঁতের মর্ম

দাঁতের মর্ম

লেখক: আরিফুর রহমান

একটি ছোট গর্তের ভিতর একটি ইঁদুর বাস করতো। তার নাম ছিল মিঠু। মিঠু তার দাঁত নিয়ে খুব গর্ব করতো। তার দাঁতগুলো ছিল ঝকঝকে সাদা আর মজবুত। পথে কারোর সাথে দেখা হলেই দাঁত কেলিয়ে হাসি দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করতো। আপেল বা পেয়ারা হাতে নিয়ে কারোর সামনে গিয়ে দাঁত বের করে কামর বসিয়ে কচকচ করে খেত আর দাঁত বের করে হাসি দিত। তার এই সব করার মূল লক্ষ্য ছিল, তার যে সুন্দর ঝকঝকে দাঁত আছে তা দেখানো। এক কথায় দাঁতগুলো নিয়ে তার গর্বের কোন সীমা ছিল না।

দাঁতের যত্নে অবহেলা

মিঠু তার দাঁতগুলো নিয়ে যতটা গর্ববোধ করতো, ততটাই সে তাদের যত্নে অবহেলা করতো। কারণ সে ছিল প্রচণ্ড রকমের অলস। প্রতিদিন রাতে দাঁত ব্রাশ করা, দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাবার পরিষ্কার করা - এসব কাজ সে কখনোই করতো না। সে ভাবতো, "আমার দাঁত তো শক্ত আর সুন্দর, এদের যত্নের কি প্রয়োজন?"

বিপদের শুরু

তো দাঁতের যত্ন না নিলে সবার যা হয়, মিঠুরও তাই হলো। তার দাঁতগুলোতে দন্তক্ষয় শুরু হলো, দাঁতে ব্যথা শুরু হলো, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া শুরু হলো। মিঠু একদম কাবু হয়ে গেলো। তার সহপাঠীরা তাকে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলো, কিন্তু মিঠু তাদের কারোর কথাই শুনলো না। সে ভাবতো, "দাঁতের ডাক্তার? দাঁত এতই মজবুত যে তাদের কোন সমস্যা হবে না।"

কঠিন খাবারের সাথে যুদ্ধ

কিছুদিন পর মিঠু শক্ত কিছু খেতে গেলেই তার দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা হতে শুরু করলো। এই কারণে সে তরল খাবার গ্রহণ করতে শুরু করলো। কোন কিছু কচকচ করে খাওয়া তার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে গেলো। কিন্তু তবুও সে নিজের অলসতা ছাড়তে পারলো না, দাঁতের যত্ন নিলো না।

দাঁত হারানোর করুণ পরিণতি

একদিন সকালে মিঠু ঘুম থেকে উঠে আবিস্কার করলো, তার মুখে কোন দাঁত নেই। তার সব দাঁত বালিশের পাশে পরে আছে। দাঁত হারানোর শোকে এবং লজ্জায় মিঠু কাউকে মুখ দেখাতে পারলো না। সে তার গর্তের ভিতরই লুকিয়ে থাকলো। তার মুখের সব দাঁত হারিয়ে যাওয়ার পর সে বুঝতে পারলো, দাঁতের যত্ন নেয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

অনুশোচনা

মিঠু তখন দাঁতগুলোর জন্য আফসোস করতে লাগলো এবং বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, "আমি যদি নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতাম তাহলে আজ এই পরিস্থিতিতে পরতে হতো না।" তার এই করুণ অবস্থা দেখে তার সহপাঠীরাও খুব দুঃখ পেলো। তারা তাকে অনেকবার পরামর্শ দিয়েছিল, কিন্তু মিঠু তাদের কারোর কথাই শোনেনি। এখন সে সেই ভুলের মাশুল দিচ্ছে।

শিক্ষার মর্ম

মিঠুর এই গল্প আমাদের শেখায়, স্বাস্থ্য সমস্যা অবহেলা করা উচিৎ নয়। দাঁত শুধু আমাদের খাওয়ার কাজে লাগে না, তারা আমাদের মুখের সৌন্দর্যও বাড়ায়। দাঁতের যত্ন না নিলে দাঁতের সমস্যা দেখা দেয়, যা আমাদের জীবনে অনেক কষ্টের কারণ হতে পারে।

নতুন জীবন

মিঠু অনেক দিন তার গর্তের ভিতর লুকিয়ে থাকলো। কিন্তু একদিন সে ভাবলো, "এভাবে লুকিয়ে থাকলে তো আমার সমস্যার সমাধান হবে না। আমাকে দাঁতের ডাক্তারের কাছে যেতেই হবে।" তাই সে তার সহপাঠীদের সাহায্য নিয়ে দাঁতের ডাক্তারের কাছে গেলো।

চিকিৎসা এবং সচেতনতা

ডাক্তার মিঠুর দাঁতের সমস্যাগুলো পরীক্ষা করলেন এবং তাকে কিছু চিকিৎসা দিলেন। তিনি মিঠুকে বললেন, "দাঁতের যত্ন না নিলে দাঁত হারানো খুবই সাধারণ ঘটনা। তুমি যদি এখন থেকে নিয়মিত দাঁতের যত্ন নাও, তাহলে আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।"

শিক্ষার ফল

মিঠু ডাক্তার এর কথামতো নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতে শুরু করলো। প্রতিদিন রাতে দাঁত ব্রাশ করা, দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে খাবার পরিষ্কার করা - এসব কাজ সে নিয়মিত করলো। ধীরে ধীরে তার দাঁতের অবস্থা ভালো হতে শুরু করলো।

নতুন সিদ্ধান্ত

মিঠু এবার ঠিক করলো, সে তার এই অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে শেয়ার করবে। সে তার সহপাঠীদের বললো, "আমার জীবনের এই ভুল থেকে তোমরা শিক্ষা নাও। দাঁতের যত্ন না নিলে আমার মত তোমরাও কষ্ট পাবে।"

সচেতনতার বার্তা

মিঠু তার গল্প সব জায়গায় ছড়িয়ে দিলো। তার সহপাঠীরা তার কথা শুনে সচেতন হলো এবং তারাও নিয়মিত দাঁতের যত্ন নিতে শুরু করলো। মিঠুর এই অভিজ্ঞতা তাদের সবাইকে স্বাস্থ্য সচেতন হতে সাহায্য করলো।

মিঠুর গল্প আমাদের শেখায় যে স্বাস্থ্য সমস্যা অবহেলা করা উচিৎ নয়। দাঁতের যত্ন নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এবং সময়মতো যত্ন নিলে অনেক সমস্যাই এড়িয়ে চলা যায়। মিঠুর অভিজ্ঞতা আমাদের জীবনে স্বাস্থ্য সচেতন হতে সাহায্য করে, এবং আমরা যদি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলি, তাহলে আমাদের জীবন আরও সুন্দর এবং সুখময় হবে।

মিঠুর মত আমাদেরও উচিত, সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা। আমরা যদি নিয়মিত আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন হই, তাহলে আমাদের জীবন অনেক সহজ এবং সুখময় হবে। আমাদের এই সচেতনতা আমাদের এবং আমাদের পরিবারের জন্য অনেক মঙ্গল বয়ে আনবে।