অলসতা
লেখক: আরিফুর রহমান
এক সুন্দর ছোট্ট শহরে একটি বিড়াল থাকতো। তার নাম ছিলো টমি। টমি ছিল প্রকৃত পক্ষে খুবই কর্মঠ, অন্যদের কাজ করার ক্ষেত্রে সে সবসময় দায়িত্ব নিয়ে কাজ সম্পাদন করতো যথা সময়ে। অন্যদের সাহায্য করতে, তাদের সমস্যার সমাধান করতে সে সবসময় প্রস্তুত থাকতো। তবে নিজের ব্যক্তিগত কাজ করার ক্ষেত্রে টমি ছিল অত্যন্ত অলস।
দায়িত্বশীলতার গল্প
টমি ছিল একটি অফিসের কর্মী। তার সহকর্মীরা তাকে খুবই পছন্দ করতো কারণ সে সবসময় সহকর্মীদের সাহায্য করতো, অফিসের কাজে কখনও দেরি করতো না, এবং সবসময় হাসিমুখে কাজ করতো। টমির বস তাকে খুবই প্রশংসা করতেন এবং তার কাজের জন্য তাকে নানা রকম পুরস্কারও দিয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনের অলসতা
কিন্তু টমির ব্যক্তিগত জীবনে এক ধরনের আলস্য বিরাজ করতো। বন্ধুদের ইমেইলের উত্তর দেয়া, কাউকে কাজের পারিশ্রমিক চেয়ে ইমেইল পাঠানো, দাড়ি কামানো, কাপড়-চোপড় ধোয়া - এইসব ব্যক্তিগত কাজ সে কখনও সময়মতো করতো না। টমি সবসময় ভাবতো, "এই কাজগুলো পরে করলেও হবে। এখন অফিসের কাজগুলো আগে শেষ করি।"
কাজের চাপ
টমির ব্যক্তিগত কাজগুলো জমতে জমতে একসময় পাহাড় সমান হয়ে গেলো। বন্ধুরা তাকে ইমেইল পাঠিয়ে বিভিন্ন কথা জানাতো, কিন্তু টমি তাদের উত্তর দিত না। তার বন্ধুরা ভেবে বসলো, "টমি নিশ্চয়ই অহংকারী হয়ে গেছে, তাই আমাদের ইমেইলের উত্তর দেয় না।" ধীরে ধীরে টমির বন্ধুরা তার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিলো।
বন্ধুদের হারানো
বন্ধুরা টমির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে টমি খুবই মনমরা হয়ে গেলো। সে ভাবলো, "কেন আমার বন্ধুরা আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো? আমি তো তাদের কোন ক্ষতি করিনি!" তারপর টমি ভাবলো, "হয়তো আমি তাদের ইমেইলের উত্তর দেইনি বলেই তারা রাগ করেছে।"
পাহাড় সমান কাজের চাপ
এদিকে টমির ব্যক্তিগত কাজের চাপ ক্রমাগত বেড়ে চললো। তার কাপড়-চোপড় ধোয়া হচ্ছিল না, দাড়ি অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল, এবং নানা ধরনের ব্যক্তিগত কাজ জমে গিয়েছিল। টমি বুঝতে পারছিল না, এই কাজগুলো কিভাবে শেষ করবে। কাজের চাপ তাকে মানসিকভাবে পীড়া দিতে শুরু করলো।
সময়ের মূল্য
একদিন টমি তার বন্ধুরা কি বলেছিলো সেটা ভাবতে লাগলো। তারা সবসময় বলতো, "সময়ের কাজ সময়মতো করা উচিত, নাহলে কাজ জমে গিয়ে পরে সমস্যা হয়।" টমি তখন বুঝতে পারলো, সে তার ব্যক্তিগত কাজগুলো সময়মতো না করায় তার জীবন কেমন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।
পরিবর্তনের শুরু
টমি সিদ্ধান্ত নিলো, সে তার জীবনের এই আলস্য দূর করবে। প্রথমে সে তার বন্ধুরা যাদের ইমেইলের উত্তর দেয়নি, তাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ইমেইল পাঠালো। সে লিখলো, "আমি দুঃখিত যে আমি তোমাদের ইমেইলের উত্তর দিতে দেরি করেছি। আমি সত্যিই ক্ষমাপ্রার্থী এবং আশা করি তোমরা আমাকে ক্ষমা করবে।"
কাজের তালিকা
এরপর টমি একটি কাজের তালিকা তৈরি করলো। সে তার প্রতিদিনের কাজগুলো একটি তালিকায় লিখে রাখলো এবং সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করলো। সে প্রতিদিন সকালে উঠে সেই তালিকা দেখে কাজ শুরু করতো।
পরিবর্তনের ফলাফল
কিছুদিনের মধ্যেই টমি তার জমে থাকা কাজগুলো শেষ করতে শুরু করলো। তার বন্ধুরা তার ইমেইলের উত্তর পেয়ে খুশি হলো এবং আবার তার সাথে যোগাযোগ শুরু করলো। টমি বুঝতে পারলো, সময়ের কাজ সময়মতো করার মধ্যে যে আনন্দ আর সাফল্য থাকে, সেটা অন্য কিছুতে নেই।
শেষ কথা
টমির এই অভিজ্ঞতা আমাদের শেখায়, সময়ের কাজ সময়মতো সম্পন্ন করা উচিত। যদি আমরা সময়মতো কাজ না করি, তবে সেই কাজগুলো জমতে জমতে আমাদের জীবনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। টমির মত আমাদেরও উচিত, সময়মতো কাজ শেষ করা এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্য দিতে শেখা।
টমি এখন আর অলস না, সে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে তার কাজগুলো সম্পন্ন করে। তার জীবন এখন অনেক সহজ এবং সুখময়। সময়ের কাজ সময়মতো করার এই অভ্যাস তাকে আরও সফল এবং সুখী করে তুলেছে।
টমির জীবনের এই শিক্ষাটি আমাদের সকলের জন্য প্রযোজ্য। আমরা যখন আমাদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন করি, তখন আমাদের জীবন অনেক সহজ এবং শান্তিময় হয়। আমাদের উচিত, সময়ের মূল্য বুঝে আমাদের কাজগুলো সময়মতো সম্পন্ন করা এবং জীবনে সফল হওয়ার পথে এগিয়ে চলা।