অ্যাকোয়ারিয়াম
লেখক: আরিফুর রহমান
একদিন এক ছোট্ট বালকের খুব শখ হলো, সে তার বাসায় একটি অ্যাকোয়ারিয়াম করবে এবং সেখানে কিছু রঙবেরঙের মাছ পুষবে। তার নাম ছিলো সজল। সজল খুবই প্রাণীপ্রেমী ছিলো, আর রঙিন মাছের প্রতি তার দুর্বলতা ছিলো।
পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন
সজল তার ইচ্ছেটা জানালো তার বাবা-মাকে। তারা তাকে সম্মতি দিলো এবং তার জন্য কিছু টাকা দিলো মাছ কেনার জন্য। সজল সেই টাকা নিয়ে বাজারের সৌখিন মাছের দোকানে গেলো। দোকানে গিয়ে সে দেখতে শুরু করলো নানা রঙের মাছ। সজল সবকিছু দেখে সিদ্ধান্ত নিলো, সে একটা কমলা, একটা কালো, একটা সাদা আর একটা নীল রঙের মাছ কিনবে।
দোকানির পরামর্শ
দোকানিকে তার পছন্দের কথা জানাতেই, দোকানী জানালো, "দেখো, এই নীল রঙের মাছটা অন্য সকল মাছের থেকে আলাদা। সে একা একা থাকতে পছন্দ করে। তার সাথে যদি অন্য কোন মাছ রাখা হয় তাহলে সে অন্য মাছদের মেরে ফেলে।"
সিদ্ধান্ত বদল
দোকানির এই কথা শুনে সজল একটু থমকে গেলো। সে ভাবলো, "তাহলে নীল মাছটা না নিয়ে বাকি তিনটা মাছই নিই।" তাই সে কমলা, কালো আর সাদা এই তিনটি মাছ কিনে বাড়িতে এলো। সে একটি সুন্দর অ্যাকোয়ারিয়াম তৈরি করলো এবং সেখানে মাছগুলোকে রেখে দিলো। নিয়মিত খাবার আর পরিচর্যা করতে লাগলো।
মাছের সাথে বন্ধুত্ব
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সজল অ্যাকোয়ারিয়ামের কাছে যেতো। মাছগুলোকে দেখত আর তাদের সাথে খেলা করতো। মাছগুলোও সজলকে দেখে খুশি হতো। সজল দেখতো, কমলা, কালো আর সাদা মাছগুলো মিলেমিশে খুব ভালো থাকতো।
নীল মাছের প্রতি আকর্ষণ
কিন্তু হঠাৎ একদিন সজলের মনে হলো, দোকানীর বারণ শুনে সে ভুল করেছে। নীল রঙের ওই মাছটি যদি এই অ্যাকোয়ারিয়ামে থাকতো, তাহলে দেখতে অনেক সুন্দর লাগতো। সে ভাবলো, "নীল মাছটা এত সুন্দর! ওটা আমার অ্যাকোয়ারিয়ামে থাকলে অ্যাকোয়ারিয়ামের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেতো।"
বিপদ সংকেত উপেক্ষা
সজল ঠিক করলো, সে নীল রঙের মাছটি কিনবেই। তাই সে আবার দোকানে গেলো। দোকানদারকে সে বললো, "আমি নীল রঙের মাছটা কিনতে চাই।" দোকানী আবারও সতর্ক করলো, "নীল মাছটা কিন্তু অন্য মাছদের সাথে থাকতে পারে না। সে একা থাকতে ভালোবাসে।"
নীল মাছের আগমন
তবে সজল দোকানির কথা উপেক্ষা করে নীল রঙের মাছটা কিনে নিয়ে এলো এবং অ্যাকোয়ারিয়ামে অন্য মাছগুলির সাথে রেখে দিলো। সেই দিন রাতে সজল খুব খুশি ছিলো। সে ভাবলো, "এখন আমার অ্যাকোয়ারিয়াম অনেক সুন্দর লাগছে।"
দুঃস্বপ্নের সকাল
পরদিন সকালে সজল ঘুম থেকে উঠে যথারীতি অ্যাকোয়ারিয়ামের কাছে গেলো। কিন্তু সেখানে যা দেখলো, তাতে তার মন ভেঙে গেলো। নীল রঙের মাছটি পানিতে সাঁতার কাটছে, কিন্তু কমলা, কালো আর সাদা মাছগুলোর ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দেহাংশ অ্যাকোয়ারিয়ামের তলানিতে পড়ে আছে।
শিক্ষার মর্ম
সজল তখন বুঝলো, দোকানির কথাকে উপেক্ষা করে সে ভুল করেছে। বিপদ সংকেত উপেক্ষা করে সে নিজের ইচ্ছামত কাজ করেছিলো, যার ফলস্বরূপ তার প্রিয় মাছগুলো মরে গেছে।
মর্মান্তিক পরিণতি
এই ঘটনার পর সজল অনেকদিন মনমরা হয়ে ছিলো। সে তার প্রিয় মাছগুলোকে হারানোর কষ্ট ভুলতে পারছিলো না। সে বুঝতে পারলো, কখনও কখনও আমরা আমাদের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে অন্যদের কথা শুনলে অনেক বিপদ এড়াতে পারি।
শেষ কথা
এই গল্প থেকে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাই। বিপদ সংকেত উপেক্ষা করে সেই পথে অগ্রসর হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। আমাদের জীবনে কখনও কখনও অন্যদের পরামর্শ মানতে হয়, বিশেষত যখন সেটা আমাদের ভালো এবং নিরাপদ থাকার জন্য প্রয়োজন। সজল তার ভুল থেকে শিখলো, এবং পরবর্তীতে আরও সতর্ক হয়ে চলতে লাগলো।
সজলের অ্যাকোয়ারিয়াম এখন আর আগের মতো রঙিন না, কিন্তু সে জানে, সে জীবনের একটি বড় শিক্ষা পেয়েছে। এখন সে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভালো করে চিন্তা করে, এবং যাদের পরামর্শ নেওয়া উচিত, তাদের কথা শোনে। এর মাধ্যমে তার জীবন আরও সুন্দর এবং নিরাপদ হয়ে উঠলো।