বুধবার, ১২ এপ্রিল, ২০১৭

গল্প - ২: বিড়াল আর খরগোশ

বিড়াল আর খরগোশ

লেখক: আরিফুর রহমান

একটি ছোট্ট, সবুজ ঘাসে ঘেরা ঝোপের ভিতরে একটি বুনো খরগোশ থাকতো। তার নাম ছিলো ঝর্ণা। ঝর্ণা সারাদিন ঝোপের মধ্যে লাফালাফি করে বেড়াতো, মাটিতে গর্ত করতো, আর নানা রকম ফল আর পাতা খেতো। ঝোপের প্রতিটি কোণায় সে ঘুরে বেড়াতো আর তার জন্য ঝোপটাই ছিলো পুরো পৃথিবী।

বিড়ালের আগমন

একদিন ঝোপের কাছে একটি বিড়াল এসে হাজির হলো। তার নাম ছিলো টিমো। টিমো শহর থেকে এসেছিলো, আর শহরের হট্টগোল আর কোলাহল তাকে খুবই চিন্তিত করে তুলেছিলো। সে একটি নির্জন স্থানে একটু শান্তি পেতে চেয়েছিলো, তাই সে জঙ্গলে চলে এসেছিলো। ঝর্ণাকে দেখে টিমো কৌতূহলী হয়ে উঠলো এবং জিজ্ঞাসা করলো, "তুমি যে ঝোপে ঝাড়ে সারাদিন ঘুরে বেড়াও, তোমার ভয় করে না? আমার তো জঙ্গলে থাকার কথা মনে হলেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে।"

খরগোশের জবাব

ঝর্ণা মুচকি হেসে বললো, "আমার জন্ম বেড়ে ওঠা সবই এই জঙ্গলের ভিতরে। আমি এই জঙ্গলকে ভালোবাসি। এখানে প্রতিটি গাছ, প্রতিটি ঝোপ আমার বন্ধু। আমি এই জঙ্গলের প্রতিটি রাস্তা চিনি। আমার বরং লোকালয়ে থাকার কথা মনে হলেই ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে। শহরের শব্দ, গাড়ির হর্ন, মানুষের ভিড় - সব কিছু আমার কাছে ভয়ের মতো লাগে।"

পরিবেশের স্বাচ্ছন্দ্য

ঝর্ণার কথা শুনে টিমো কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। তারপর বললো, "তুমি ঠিকই বলেছো, ঝর্ণা। যার যে পরিবেশে জন্ম, সে তার আপন পরিবেশেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। আমি শহরের বিড়াল, আমার জন্য শহরের কোলাহলই স্বাভাবিক। কিন্তু মাঝে মাঝে আমিও শান্তির খোঁজে জঙ্গলে চলে আসি।"

বন্ধুত্বের শুরু

ঝর্ণা এবং টিমো এরপর থেকে ভালো বন্ধু হয়ে গেলো। ঝর্ণা টিমোকে জঙ্গলের নানা অজানা কথা শোনাতো, আর টিমো ঝর্ণাকে শহরের নানা গল্প বলতো। তারা একে অপরের পরিবেশকে বুঝতে শিখলো, এবং একে অপরের জীবনের স্বাদ নিতে শুরু করলো। ঝর্ণা মাঝে মাঝে টিমোর সাথে শহরে যেতো, আর টিমো মাঝে মাঝে ঝর্ণার সাথে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতো।

পরস্পরের পরিবেশকে বোঝা

তারা দুজনেই বুঝতে পারলো, তাদের নিজ নিজ পরিবেশে তারা যেমন স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, তেমনি অন্য পরিবেশকেও সম্মান করতে হয়। ঝর্ণা টিমোকে জঙ্গলের নিরাপত্তা, খাদ্যের সন্ধান, এবং নানা ধরনের প্রাণীদের সম্পর্কে জানালো। আর টিমো ঝর্ণাকে শহরের জীবনের কৌশল, নিরাপত্তা, এবং খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতি শিখালো।

শিক্ষার মর্ম

এই বন্ধুত্ব তাদের দুজনকেই নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করলো। ঝর্ণা বুঝতে পারলো, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে শিখতে হয়, এবং নতুন পরিবেশকে গ্রহণ করতে হয়। টিমোও বুঝতে পারলো, কখনও কখনও নিজের আরাম অঞ্চল থেকে বেরিয়ে নতুন কিছু শিখতে হয়।

অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান

একদিন ঝর্ণা আর টিমো মিলে জঙ্গলের গভীরে এক গুহার কাছে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে তারা নানা ধরনের পশুপাখি দেখতে পেলো, আর নানা ধরনের শব্দ শুনতে পেলো। টিমো প্রথমে একটু ভয় পেয়েছিলো, কিন্তু ঝর্ণা তাকে সাহস দিলো। সে বললো, "ভয় পেও না, টিমো। আমি আছি তোমার সাথে। এই জঙ্গল আমার বাড়ি, আর তুমি আমার বন্ধু।"

সাহস এবং বন্ধুত্ব

ঝর্ণার কথা শুনে টিমো সাহস পেলো। সে বুঝতে পারলো, সত্যিকার বন্ধুত্ব আর সাহস থাকলে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। তারা দুজন মিলে গুহার ভেতরে ঢুকে নানা ধরনের পাথর, ফুল আর পশুপাখির ঘর দেখতে পেলো। তাদের এই অভিযানে তারা দুজনেই অনেক কিছু শিখলো এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বাড়িয়ে তুললো।

সমাপ্তি

ঝর্ণা এবং টিমো আবার ঝোপের দিকে ফিরে এলো। তাদের এই ছোট্ট অভিযানে তারা নতুন কিছু শিখলো, নতুন কিছু দেখলো, এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা বাড়িয়ে তুললো। তারা বুঝতে পারলো, যার যে পরিবেশে জন্ম সে তার আপন পরিবেশেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কিন্তু সেই পরিবেশের বাইরে গিয়েও অনেক কিছু শিখা যায়, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।

শেষ কথা

এই গল্পের শিক্ষা হলো, আমরা সবাই আমাদের নিজ নিজ পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। কিন্তু জীবনের পথে কখনও কখনও নতুন পরিবেশকে গ্রহণ করতে হয়, নতুন কিছু শিখতে হয়। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে শিখতে হয়, আর সেই শেখার মাধ্যমেই আমরা আরও সমৃদ্ধ হতে পারি।